বর্তমান সময়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ভালো মানের শিক্ষা ও উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধার খোঁজ করেন। বিশেষ করে বিদেশে পড়াশোনা করার সুযোগ পেলে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণ হয়। তুরস্ক সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ দিচ্ছে। ‘তুর্কি বুর্সলারি স্কলারশিপ’ নামে পরিচিত এই সুবিধাটি উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য এক বিশেষ প্রাপ্তি।
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে তুরস্ক সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে বিনা খরচে পড়ার সুযোগ দিচ্ছে। এই স্কলারশিপের আওতায় ৫৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করা যাবে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তুরস্কের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অনেক দেশের তুলনায় উন্নত। মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় তাদের মান অত্যন্ত উচ্চ। বায়োটেকনোলজি, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, পদার্থবিদ্যা, খাদ্য প্রকৌশল, গণিত এবং মেডিসিনসহ হাজারের বেশি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাবেন।
তুরস্ক সরকারের স্কলারশিপ ২০২৫-২৬
আবেদন করতে হলে অনলাইনে আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট হলো: https://tbbs.turkiyeburslari.gov.tr। বিস্তারিত তথ্যের জন্য https://turkiyeburslari.gov.tr ওয়েবসাইট ভিজিট করা যেতে পারে।
আবেদনের শেষ তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি। আবেদন করতে হলে সঠিক যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত রাখা জরুরি।
সুযোগ-সুবিধাসমূহ
তুর্কি বুর্সলারি স্কলারশিপ শিক্ষার্থীদের জন্য নানান সুবিধা নিয়ে এসেছে। এই স্কলারশিপে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে তা নিম্নরূপ:
১. পুরো টিউশন ফি তুরস্ক সরকার বহন করবে।
২. শিক্ষার্থীদের মাসিক ভাতা প্রদান করা হবে।
৩. স্নাতকের জন্য প্রতি মাসে ৭০০ তুর্কি লিরা, স্নাতকোত্তরের জন্য ৯৫০ তুর্কি লিরা এবং পিএইচডির জন্য ১৪০০ তুর্কি লিরা দেওয়া হবে।
৪. গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রতি মাসে ৩০০০ তুর্কি লিরা দেওয়া হবে।
৫. আবাসনের সুবিধা থাকবে। স্নাতকের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা খরচে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
৬. দ্বিতীয় বছর থেকে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনে ৫৫০ লিরা প্রদান করতে হবে।
৭. পাবলিক হেলথ ইনস্যুরেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্যব্যয় বহন করা হবে।
৮. বিমান ভাড়া তুরস্ক সরকার বহন করবে।
৯. বিনা খরচে এক বছরের তুর্কি ভাষার কোর্স করা যাবে।
১০. ইউনিভার্সিটির কোর্সে ভালো ফল করলে ইউরোপের যেকোনো দেশে এক সেমিস্টার পড়ার সুযোগ থাকবে।
যোগ্যতার শর্ত
স্কলারশিপের জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে।
১. তুরস্কের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ভর্তি থাকা যাবে না।
২. স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদন করার জন্য সর্বোচ্চ বয়স ২১ বছর।
৩. স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে ৩৫ বছর।
৪. গবেষণার জন্য আবেদন করতে হলে সর্বোচ্চ বয়স ৪৫ বছর।
৫. মেডিসিন এবং ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদন করতে হলে এইচএসসিতে ৯০% নম্বর থাকতে হবে। অন্যান্য বিষয়ের জন্য এইচএসসিতে ৭০% নম্বর থাকতে হবে।
৬. স্নাতকোত্তরে ৭০% এবং পিএইচডিতে ৭৫% নম্বর থাকা আবশ্যক।
৭. আবেদনকারীর ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
আবেদন করার সময় সঠিক নথি জমা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় নথিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
২. পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদের স্ক্যানড কপি।
৩. শিক্ষা জীবনের সব সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট।
৪. একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট।
৫. দুটি রেফারেন্স লেটার।
৬. মোটিভেশনাল লেটার।
৭. স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি)।
৮. রিসার্চ প্রপোজাল।
৯. টোফেল বা জিআরই সার্টিফিকেট (যদি থাকে)।
১০. অতিরিক্ত কার্যক্রমের সার্টিফিকেট।
কেন তুরস্কে পড়াশোনা করবেন
তুরস্ক তার উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণার সুযোগ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বিশেষ করে মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় তাদের সুনাম অনেক। তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আধুনিক প্রযুক্তি এবং গবেষণার সুযোগ দিয়ে স্নাতকদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখে।
তুরস্ক সরকারের এই স্কলারশিপ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। এটি শুধু শিক্ষার খরচ বহন করে না, বরং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। সময়মতো আবেদন করে এই সুযোগ কাজে লাগানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাই দেরি না করে প্রস্তুতি শুরু করুন এবং আপনার স্বপ্নের উচ্চশিক্ষার পথে এগিয়ে যান।